About Me

My photo
Kolkata, West Bengal, India
A FLAPDOODLE ... A COPROLALOMANIAC ... A DOPPELGANGER ... a blog when written when deranged for a man to give one gyp and what a gyp with a gusto ... this blog a mistaken ladder furnishes its one carrying self-lagoon ... rotten blog holding a periapt to vomit to laugh and cry and shout and yell ... a preface to the birth of an ablazed moon ... all white all gay all blood all sand ...

Tuesday, 7 July 2015

কালিঝুলি

(রচনাকাল : ২৫-২৮ মে, ২০১৫)



"সহসা কোনো দেশ অন্ধ হয়ে যায় না। প্রথমে আসে ক্ষীণ দৃষ্টি, পরে দৃষ্টিহীনতা। তারপরে অন্ধত্ব। এরপরে জন্মান্ধরা। তাদের ইস্কুলে অন্ধ শিক্ষকরা কালো চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডের ওপরে কী লেখে? কেন লেখে?"[নবারুণ ভট্টাচার্য]



আমার জীবনের প্রথম দুটি দশক ছিলো কীটপতঙ্গের জীবনের সমান। আমি পোকামাকড়ের মতো বেঁচে ছিলাম। একটি কীট যেমন তার জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি এমন কোনো কাজ করে না, যে কর্মের জন্য তার চলে যাওয়ার পর পৃথিবী তাকে মনে রাখবে; তেমনই মূল্যহীন জীবন ছিলো আমারও। তার মতোই আমারও, এই বোধটুকুও ছিলো না, যে এহেন জীবন কতো অর্থহীন। ছিলো না এই উপলব্ধিও, যে জন্মমুহূর্তে সকল জীবনই অর্থহীন থাকে, এবং কীর্তির দ্বারাই হেন নিরর্থক জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলা সম্ভব হয়। তবে সকলে তা পারেন না; এবং তা পেরে ওঠা যৎপরোনাস্তি নিষ্ঠা, সাধনা, সংগ্রাম, ও অধ্যবসায় সাপেক্ষ।


তারপর অকস্মাৎ আমার জীবনে বজ্রাঘাত হলো। বিনা মেঘেই হলো। ঐ আঘাত, আমার চেতনায় কীট থেকে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠবার ইচ্ছা সঞ্চারিত করলো। কাফকা-র গ্রেগর সামসা, ওয়ান ফাইন মর্নিং, মানুষ থেকে একটা অতিকায় পোকা হয়ে গিয়েছিলো। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো ঘটলো। তবে, আমার পোকা থেকে মানুষ হয়ে ওঠাটা আদপেই অনায়াস হলো না। প্রাথমিকভাবে, আমার এটুকু চৈতন্যোদয় হলো, যে আমার জীবনের সঙ্গে একটি পোকার জীবনের গুণগত মানের দিক থেকে কোনো ফারাক নেই, এবং একজন প্রকৃত মানুষের জীবন প্রাপ্ত হওয়া একটি পোকার জীবন কাটানোর চেয়ে ঢের ঢের অধিকতর বাঞ্ছনীয়। অতএব, এবার শুরু হলো আমার অন্বেষণ, সেই যথোপযুক্ত প্রক্রিয়াটির, যার মধ্য দিয়ে নিজেকে মাড়াই ও পেষাই করাতে করাতে, কোনো এক দিন, হয়তো বা, আমি একজন প্রকৃত মানুষের জীবন অর্জন করতে ক্ষম হলেও হতে পারি, যদি আমার মধ্যে আদৌ সে উপাদান থেকে থাকে। এবং বলাই বাহুল্য, সে প্রক্রিয়াটি যে কতখানি আয়াসসাধ্য, তা সেই মুহূর্তে আমার বোধগম্যতার অতীতই ছিলো। প্রকৃত প্রস্তাবে, সে প্রক্রিয়া আজও চলছে।


তারপর, বিগত দুটি দশক ধরে, সমকালের একজন নিকৃষ্ট লেখক হয়ে ওঠবার চেষ্টা করার থেকে, আমি আপ্রাণ আয়াসে ও যারপরনাই সযত্নে নিজেকে বিরত রেখেছি। এবং চিরকালের একজন উৎকৃষ্ট লেখক হয়ে ওঠবার স্পর্ধা দেখানোর আগে, একজন হ্যাংলা পাঠক হয়ে ওঠবার জন্য নিজের ওপর ভরসা রেখেছি। অতঃপর, চারপাশের যাবতীয় পারিপার্শ্বিক ছোট-ফুল-রাঙা-ন'-সেজো-মেজো এবং বড় প্রলোভন, প্রতিকূলতা, আর প্রতিবন্ধকতা সমূহকে অক্লান্ত ড্রিবল ও ট্যাকল করতে করতে, আমার এই হ্যাংলামোটিকে বাঁচিয়ে রাখবার যথাসাধ্য প্রযত্ন দেখে, অবশেষে জীবন একদিন আমার কানে দীক্ষামন্ত্র দিলো। যা বস্তুত এই উপলব্ধি, যে আমি ঠিক পথেই হামা কাটছি। হ্যাঁ, আমি আসলে কলমেরই কাঙাল। সেই থেকে আজবধি, জীবনের বাদবাকি অন্য সমস্ত কিছুকে, স্বেচ্ছায় এবং সচেতনে, আরো বেশী করে গৌণ করে দিয়ে, আমার এ কাঙালের ঝুলিকেই আমি নিজের এক ও একমাত্র মুখ্য সম্বল জ্ঞানে নিরন্তর চর্চা করে চলেছি।


আর আমার এই বেআক্কেলে একবগগা কাঙালপনার খেসারত হিসেবে, অগণিত নুড়কুৎ তালেবরের মুরুব্বিয়ানার পোঁদে-মুড়োয় আমায় বহুবার ভড়ভড় করে নিজের গু, মুৎ, ও বমি ঢেলে দিতে হয়েছে, আমি যে তাঁদের ফাটকা সফলতার ধান্দায় সামিল হতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছুক নই, একথা তাঁদের হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। আসলে, আমি নিজেই নিজেকে ঠকাতে চাই নি। সুযোগ সন্ধানের অভিপ্রায় মনে নিয়ে, প্রতি মুহূর্তে, বলদদের অণ্ডকোষ শুঁকতে যাই নি। যাই নি মাদী গর্দভদের গুহ্যদ্বার লেহন করতেও। আমি চাই নি, নিজের অজান্তেই, আমার আপন পরনের কাপড়খানা কখনো উঠে যাক আমার কোমরের ওপরে। চাই নি, মৃতের মিছিলে সামিল জীবিতদের দলে নিজের নাম লেখাতে। যারা এসব চেয়েছেন ও পাকেচক্রে পেয়েছেন, আজ তাঁরা যখন আয়নার সামনে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নিজেদের পেছনগুলো দ্যাখেন, প্রতিবিম্ব দেখায় ঐ জায়গাটা তাঁদের রক্তাক্ত হয়ে গেছে।


আবার, বিগত ঐ দুটি দশক ধরেই, আমার পাশাপাশি আমার অনেকানেক আত্মীয়, প্রতিবেশী, সহপাঠী, সহযাত্রী, সহকর্মী, শিক্ষক, শিষ্য, প্রশিষ্য, প্রেমিকা, ও বন্ধুদের অনেককেও (সকলকে নয়) অনেককিছুর জন্য অন্যরকম কাঙাল হতে দেখেছি, এবং দেখছি। এই অন্যরকম দই মারার তালে, বহু নেপোর হাতে-মুখে যেমন বিস্তর কালি মাখামাখি হতে দেখেছি; তেমনই আবার, কাহারও কাহারও ঝুলি হইতে বিভিন্ন সময়ে বহুবিধ আকৃতির ও বর্ণের একাধিক বেড়াল নহে, বরং বেড়ালের বোনপো বাঘ, এবং এমনকি ডাইনোসরও নির্গত হইতে দেখিয়াছি। পক্ষান্তরে, এনাদের বিপরীতে, অনেককেই আবার এমন কাঙাল হতেও দেখেছি আর দেখছি, যাদের কাঙালপনা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পেলে, তাঁরা নন, বরং সেই ক্ষেত্রগুলিই উৎকর্ষের পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত হবে। বস্তুত, এই ফারাকই আমাকে বারবার বুঝিয়ে দেয়, যে কেমনভাবে আমার একজন আত্মীয়, প্রতিবেশী, সহপাঠী, সহযাত্রী, অথবা সহকর্মীও আমার প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন; কোন গুণে আমার বন্ধু হয়ে ওঠেন আমার একজন শিক্ষক, শিষ্য, প্রশিষ্য, কিংবা প্রেমিকাও। এবং, ঠিক কোন কারনে আমার সকল আত্মীয়-প্রতিবেশী-সহপাঠী-সহযাত্রী-সহকর্মী আমার বন্ধু হতে পারেন না; আমার বন্ধু হন না আমার সমস্ত শিক্ষক-শিষ্য-প্রশিষ্য-প্রেমিকারাও। যারা পেরে ওঠেন, তাঁদের সান্নিধ্যে আসতে পেরে আমি ঋদ্ধ ও শ্লাঘান্বিত। আর যে মহামানবেরা সকলকেই নিজের বন্ধু বলে পরিচয় দেন, তাঁদের দেখলে আমার 'শনিবারের চিঠি'-র মাঘ ১৩৪৯ সংখ্যার, সজনীকান্তবাবুর বিনু-র কথা মনে পড়ে। বিনু যখন খোকা ছিলো তখন তাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয় : "খোকা, তোমরা ক' ভাই?" খোকা চটপট উত্তর দিয়েছিলো : "কেন, ছ' ভাই। আমি, বড় পিসী, বাবা, নান্তু, পাঁচী, আর হরিয়া।" বলা বাহুল্য, শেষ দুটি নাম গৃহের ভৃত্যার ও ভৃত্যর। অর্থাৎ, খোকা বিনু কাউকেই বাদ দেয় নি। সেই বিনু বড় হওয়ার পর যখন বাংলা সাহিত্যের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখলো, তখন দেখা গেলো যে সে বইতেও সে বড় পিসী, বাবা, নান্তু, পাঁচী, হরিয়া কাউকেই বাদ রাখে নি। আমি বিনু নই।


যে সদানন্দ প্রকাশনাগোষ্ঠী, বিভিন্ন পাউডার মাখা মাঝারিয়ানাকে ভগবানের বাচ্চা বানাবার চেষ্টায়, চিরকাল প্রপাগান্ডা চালিয়ে যায়, তাদের পুষ্যি কোনো এক কলমচি যখন আধখানা জীবন লেখার আদিখ্যেতা করতে গিয়ে, মিথ্যায় ও ভুলে ভরা একটি প্রলাপ প্রসব করেন, তখন একটি পুরাতন প্রবাদ মনে আসে : "হাতে কালি মুখে কালি / বাছা আমার লিখে এলি।" অর্থাৎ, খোকা পাঠশালে গিয়ে লেখাপড়া করুক বা না করুক, হাতে-মুখে বেশ খানিক কালি মেখে এলেই হলো; তাহলেই মা-বাপ ভাবেন খোকা বুঝি খুব পড়ালেখা করে এলো। তো এখনকার বাঙালী পাঁঠক-পাঁঠিকারাও সব ঐ বাপ-মায়ের মতোই বুদ্ধি ধরেন; আর তাঁদের পছন্দের লেখকরাও সব ঐ হাতে-মুখে কালি মাখা খোকার মতোই বিদ্যেধর হন। 


সব উদাহরণ দিতে গেলে মহাকাব্য লেখা হয়ে যাবে; কেবল একটি বলি। প্রলাপের ২৬০ পৃষ্ঠায় গাঙ্গুলীবাবু অ্যাস্ট্রো-ফিজিসিস্ট জেমস ভ্যান অ্যালেনের সঙ্গে নিজের সাক্ষাতের ঢ্যাঁড়া সগর্বে পেটাতে গিয়ে, বোধ করি উল্লাসের আতিশয্য বশেই, তাঁকে নিজে নিজেই নোবেল পুরস্কার দিয়ে বসেছেন। বাস্তবে, চৌষট্টি সালের জুন মাসে সেই সাক্ষাৎকালে তো নয়ই, এমনকি পরবর্তীকালে, একানব্বই বছর বেঁচে থেকে ২০০৬-এর ৯-ই আগস্ট মারা যাওয়ার দিন পর্যন্তও ভ্যান অ্যালেন নোবেল পান নি। তো হেন ভৃত্যের প্রভুও যে বিশেষ তরতম কিছু হবেন না, তা বলাই বাহুল্য। ভৃত্য প্রলাপ লিখতেন, আর প্রভু প্রলাপ ছাপেন। যেমনটি ছেপেছিলেন ২০০৪ সালের ২-রা ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত বই-সংখ্যা বা বইমেলা-সংখ্যা 'দেশ'-টির ৫৫ পাতায় একটি বিজ্ঞাপন। সে বছর বইমেলায় যাঁদের স্টল নম্বর ছিলো ১৫৫, সেই APP প্রকাশনার একটি অনুবাদ বইয়ের বিজ্ঞাপনের বয়ান ছিলো : "জেমস জয়েস-এর 'প্রতিকৃতি' ... সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার নোবেল পাওয়া লেখকের অনুরণন সৃষ্টিকারী উপন্যাস।" জয়েস যে কস্মিনকালেও নোবেল পান নি, একথাটি প্রভুর জানা থাকলেই বরং তা আশ্চর্যের হতো।


তো এহেন পাটোয়ারি প্রভু সরকারমশায় যখন গেলো বছর রামকুমারবাবুর হাতে সম্মান তুলে দেবার অছিলায়, আসলে নিজেকে জাহির করার জন্য মঞ্চে ওঠেন, তখন একথা ভেবে সত্যিই আমার হাগা পায়, যে 'ধনপতির সিংহলযাত্রা' হজম করার মতো জোর কি সরকারমশায়ের পাকস্থলির আছে! তিনি কি আদৌ রামকুমারবাবুর গ্রন্থটি পড়েছেন? আর যদি পড়েও বা থেকে থাকেন, তাহলেও রামকুমারবাবুকে সম্মান জানানোর মতো যোগ্যতা কি তাঁর আছে? এই কার্যটি তো আরো যোগ্যতর এমন কোনো মানুষ, যিনি প্রাপকের তুল্যই সৃজনশীল ও গুণী, তাঁর হস্তে নিষ্পন্ন হলেই তা অধিকতর সমাদরযোগ্য হতো। নেমিরোভিচ দানশেংকো-কে লেখা একটি চিঠিতে চেকভ বলেছিলেন : "You must not lower Gogol to the people, but raise the people to the level of Gogol." এ তত্ত্বে ভরসা রেখে চলতে চলতে, এযাবৎ আমার এটুকু প্রাপ্তি অন্তত হয়েছে, যে ব্যক্তিগতভাবে আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত-অচেনা-অদেখা কিন্তু আমার লেখার সঙ্গে পরিচিত লেখকেরা, তাঁদের বিভিন্ন লেখায় আমার লিখিত বাক্য উদ্ধৃত করে, আমাকে না হলেও আমার কলমকে সম্মানিত করেছেন। আমার কলমের ওপর আস্থা রাখার জন্য তাঁদের নিযুত সালাম। বস্তুত, আমার কলমই আমার এক এবং একমাত্র পরিচয়। এবং এ ছাড়া আমার আর অন্য কোনো পরিচয় নেই, হতে পারে না। 


কিন্তু, একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা, বাস্তবিকই বড় সহজ কর্ম নয়। অতএব, সে প্রক্রিয়া আজও চলেছে; এবং তা চলবেও আমৃত্যু। আর এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেকে নির্মাণ হতে দিতে দিতে, নিজের বিনির্মাণ করতে করতে, নিজের প্রতিনির্মাণ হওয়াতে হওয়াতে, আমি অনুভব করতে শুরু করি, যে আমার সত্ত্বায়-চেতনায়-মননে এসে মিশতে আরম্ভ করেছেন, দিকপাল লেখকেরা এবং তাঁদের মহাগ্রন্থসমূহের চরিত্রেরা। উপাখ্যানের ঘটনারা আমার জীবনে জ্যান্ত হয়ে উঠতে থাকে। বুঝি, এ ভ্রম নয়, বাস্তব। আরো বুঝি, জীবনের এই সব মহাসন্ধিক্ষণ, কেবলই বহুকাঙ্খিত আশীর্বাদ বহন করে আনে না; বরং সঙ্গে আনে ততোধিক অবাঞ্ছিত অভিসম্পাতও, আমরা চাই বা না চাই।


মনে পড়ে, Antonin Artaud -র আপ্তবাক্য : "Tragedy on the stage is no longer enough for me, I shall bring it into my own life." 'রাইনোসেরাস' নাটকের ডেইজি-র মতো আমার প্রেমিকাও এক সন্ধ্যায় গণ্ডার হয়ে যায়। আমি হঠাৎই যেন আয়োনেস্কো-র বেরেঞ্জার হয়ে উঠি। জয়েসের স্ত্রী নোরা-র মতো আমার স্ত্রীও আমাকে এক রাতে সস্নেহ তিরস্কারে বলে ফ্যালেন : "তুমি সহজ কিছু লিখতে পারো না, যা লোকের বুঝতে সুবিধা হয়?" আমি যেন এক টুকরো জয়েস হয়ে উঠি। আবার, টেলিফোনে স্বামীর নোবেল প্রাপ্তির সংবাদ শুনে হতচকিত সুজান বেকেট, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যেমন বলে উঠেছিলেন সেই ফরাসী শব্দদুটি : "quelle catastrophe!" --- যার আক্ষরিক অর্থ হয় "কি সব্বোনাশ!", আর ভাবার্থ হলো "এত জ্ঞানীগুণী মানুষ থাকতে শেষে কি না এই মিনসেকে!" --- এমন ঘটনাও যে আমার জীবনে ঘটবার অপেক্ষায় নেই, সেকথাও বা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারে কি? আগামীতে কোনো এক দিন, এরকম কিছুও কি ঘটবে কখনো? যেদিন আমি বেকেট, জয়েস, আয়োনেস্কো, আর্তো, গোগোল, চেকভ, বা কাফকা-কেও ছাপিয়ে উঠে লিখতে পারবো : "আজ আমি নীলোৎপল হয়ে উঠলাম।" কীট কি পারবে, কিংবদন্তী হয়ে উঠতে?



[ এ লেখার শিরোনামটি, বলাই বাহুল্য, রূপক অর্থে ব্যবহৃত। হাতে-মুখে কালি মাখা বিদ্যেধর খোকার 'কালি'। আর আমার বেআক্কেলে একবগগা কাঙালের ঝুলির 'ঝুলি'। এ লেখায় উল্লিখিত এই দুই সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ মেরুর প্রতীকী উপাদান মিলে, এ লেখার নাম হয়েছে 'কালিঝুলি'। দ্বিতীয় একটি মজার সংসক্তিও এ নামকরণের অবচেতনে কাজ করেছে। প্রাচ্যের কাল্পনিক চরিত্র সিধুজ্যাঠা কিংবা পাশ্চাত্যের বাস্তব সার্চ-ইঞ্জিন গুগল-এর চেয়েও অধিকতর নির্ভরযোগ্য, জ্ঞানের আকর ও আধার যে মানুষটিকে আমি আমার একজন অন্যতম দীক্ষাগুরু বলে মানি, সেই নীরদ সি. চৌধুরীর গৃহপোষ্য কালো বেড়ালটির আদুরে নামও ছিলো 'কালিঝুলি'। আর এহেন শিরোনাম রাখার তৃতীয় অনুষঙ্গটি, অতি অবশ্যই শুরুতে উদ্ধৃত নবারুণবাবুর বাক্যটিতে অন্ধত্ব, কালো চক, ও ব্ল্যাকবোর্ডের আলংকারিক প্রয়োগ। চতুর্থত, পর্তুগীজ ঔপন্যাসিক হোসে সারামাগো-র 'ব্লাইন্ডনেস' গ্রন্থটি কি পাঠক-পাঠিকাদের পড়া আছে? আরো বাড়তি কোনো প্রতিবস্তূপমা তাঁরা তাঁদের নিজেদের মতো করে খুঁজে নিতেই পারেন। অধিকন্তু ন দোষায় ... ]

No comments:

Post a Comment