About Me

My photo
Kolkata, West Bengal, India
A FLAPDOODLE ... A COPROLALOMANIAC ... A DOPPELGANGER ... a blog when written when deranged for a man to give one gyp and what a gyp with a gusto ... this blog a mistaken ladder furnishes its one carrying self-lagoon ... rotten blog holding a periapt to vomit to laugh and cry and shout and yell ... a preface to the birth of an ablazed moon ... all white all gay all blood all sand ...

Saturday 15 September 2012

'দৃশ্যপট'-এর "অয়দিপউস" : একটি পর্যবেক্ষণ


           ধরা যাক, ঋত্বিক ঘটকের নির্দেশনায় নায়ক-নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করছেন যথাক্রমে Christopher Plummer এবং Elizabeth Taylor ! এহেন পরিস্থিতিতে চিত্রনাট্যটি যদি এমনকি হরনাথ চক্রবর্তী মশাইও লেখেন, তাতেও কিছু যায়-আসে কি? (তা বলে দয়া করে কেউ যেন এমনটি ভেবে বসবেন না, যে হর ভট্টাচার্য আর হরনাথ চক্রবর্তীকে আমি তুল্যমূল্য বলছি ! কদাচ নহে।) কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে মেনে নিতেই হচ্ছে যে, দৃশ্ যপট প্রযোজনার 'অয়দিপউস' নাটকের মূল চারটি স্তম্ভের (যে কোনও অন্য নাটকের মতই) মধ্যে যদি কোনও একটি আদৌ একটু নড়বড়ে বলে মালুম হয়, তবে সেটি ঐ হর ভট্টাচার্যের চিত্রনাট্যখানিই বটে। সাবধান পাঠক ! এখুনি আরও একটি মন্তব্য ভেবে ফেলার আগে, আমার লেখা আগের বাক্যখানি ফের একবার পড়ুন --- in between the lines পড়ুন। সেখানে নিহিত বক্তব্য আসলে একথাই কি বলতে চাইছে না, যে অয়দিপউস-এর ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদার, য়োকাস্তার ভূমিকায় সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়, আর নির্দেশনায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য --- যে আকাশ আজ এঁরা ছুঁয়ে ফেললেন, সেখানে দাঁড়িয়ে দৃকপাত করলে, হর ভট্টাচার্য ও তাঁর চিত্রনাট্যখানিকে ধারে তথা ভারে নিতান্তই খাটো আর সাদামাটাই লাগছে বটে, বাস্তবিকই তা যথেষ্ট এবং ওজনদার হওয়া সত্তেও ! তবে দুটি ত্রুটি নিশ্চিত-ই আছে বৈ কি ! কানে বেশ খোঁচা মেরেছে ! খুব জোরে না লাগলেও, লেগেছে তো ! ভুল তো ভুল-ই, না কি? (১) টাইরেসিয়াস-এর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত-এর সময় অয়দিপউস-এর সম্বোধন ছিলো "গুরুদেব ... তুমি", যা কিনা পরবর্তী প্রত্যেকবারেই "আপনি" শোনা গেলো। (২) য়োকাস্তা অয়দিপউস-এর কাছে নিজের মৃত সন্তান (সত্য জানার পূর্বে) সম্পর্কে বিলাপ করতে করতে জানায় সন্তানধারণকাল ছিলো দশ মাস (৯ মাস নয়)।


           খুবই বালখিল্য ভুল। তবে মূলতঃ চিত্রনাট্যকার দায়ী হলেও, অভিনেতা, অভিনেত্রী তথা নির্দেশক এই দায় পুরোপুরি এড়াতে পারেন কি? মনে হয়, না। তবে হ্যাঁ, মূল আখ্যান থেকে কিঞ্চিৎ deviation-এর ক্ষেত্রে climax-এ য়োকাস্তা-র আপন যোনিদ্বারে চুলের কাঁটা বিঁধিয়ে আত্মহননের মৃত্যুদৃশ্য রচনায় হর ভট্টাচার্য যথারীতি তুলনারহিত।


           তো নিন্দামন্দ থুয়ে, এট্টু মোলায়েম কথা কই ! অনির্বাণ ভট্টাচার্য-র পাসোলিনির 1967-র ইতালিয়ান চলচ্চিত্রটি (Oedipus Rex) দেখা আছে কিনা আমার জানা নেই; কিংবা Tony Richardson-এর 'Look Back In Anger' (1959) --- যার রিভিউ-তে লেখা হয়েছিলো "The audience was jolted as if they'd been sitting for 2 hours in an electric chair." তবে নাট্যমঞ্চের ঋত্বিক ঘটক হয়ে ওঠার এলেম তাঁর আলবাত আছে। বিশেষভাবে বলতেই হবে দুটি ও একটি কথা। (১) যৌনতাকে অসাধারণভাবে ব্যবহার করেছেন তিনি। এই নাটকের plot বা story-line যদি দুধ হয়, তবে যৌনতা এখানে সেই দুধের পুরু সর। অনির্বাণ এখানে সেই দুধ আর সর মন্থন করে যেন মাখন বের করে এনেছেন। যৌনতার এত সাহসী, এত শরীরী, এত আবেদনঘন, এত অবিচ্ছেদ্য ও অবশ্যম্ভাবী প্রয়োগ, মঞ্চে, প্রকৃতই অতি দুরূহ কার্য্য। (২) নৃত্যের ব্যবহার। যদিও এটি আদৌ কোনও নৃত্যনাট্য নয়, তথাপি কতখানি পরিমিতিবোধ রপ্ত হলে, নৃত্যনাট্য না হলেও নৃত্যকে নাটকের প্রত্যেক অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে, পরতে-পরতে জড়িয়ে দিয়ে, পরিপূরক করে তোলা যায় একটিকে আরেকটির, সে কাপ্তেনী আপনি দেখালেন বটে। এর অনেকখানি কৃতিত্ব অবশ্যই কোরিওগ্রাফার ঝুমা বসাক-এরও প্রাপ্য। আর এই নৃত্যের ব্যবহারকে সঙ্গতিপূর্ণ তথা যথাযথ অভিঘাতসম্পন্ন করে তোলার ভিত্তিভূমি হয়ে নিজেকে অকৃপণ বিছিয়ে রাখলো যে আবহসঙ্গীত, তার স্রষ্টাদ্বয় ময়ূখ ও মৈনাক-এর জন্যও কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। (৩) শেষ যে একটি কথা, তা নাটকের গঠনগত কাঠামো সম্পর্কিত। নাটকের plot-কে "act" (অঙ্ক) আর "scene" (দৃশ্য)-এ ভাগ করার প্রচলন প্রথম শুরু করেন Seneca, রোম-এ, তাঁর Revenge Tragedy গুলির সময় থেকে। এর পূর্বে, গ্রীস-এ, ব্যবস্থাটি ছিলো অন্যরকম। প্রথমে হতো "Prologue" (introduction) ও তারপর "Parados" (entry of chorus). এরপর হতো "Episode" (scene) আর "Stasimon" (song of chorus). এই দুটি অংশ চারবার (অর্থাৎ, চারটি Episode ও চারটি Stasimon) পুনরাবৃত্ত হতো। সবশেষে আসতো "Exodos" বা final scene. এই নাটকে অনির্বাণ প্রতিটি নৃত্যাংশকে সার্থকভাবে একেকটি "Stasimon"-এর রূপ দিয়েছেন --- জেনে হোক, কিংবা না জেনে।





           দেবশঙ্কর-এর কথা নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। ওনার মন্দ কপাল, আর আমাদের ও আগের-পরের ধরে তিন প্রজন্মের ভাগ্যি, যে উনি এ দ্যাশে জন্মেছেন। "দেবশঙ্কর আমাদের Christopher Plummer" --- এই বাক্যখানির প্রকৃত গভীরতা কেবল তাঁরাই বুঝবেন, যাঁদের দেখে ফেলার সুযোগ বা সৌভাগ্য হয়েছে "Hamlet at Elinsore"-এর Hamlet-কে, কিংবা "Caesar and Cleopatra"-এর Julius Caesar-কে, বা "The Fall of the Roman Empire"-এর Commodus-কে, অথবা "Oedipus the King"-এর Oedipus-কে। বুঝবেন তাঁরাও, যাঁরা দেখে উঠতে পেরেছেন "Don Juan in Hell"-এর Don Juan-কে, "Alexander"-এর Aristotle-কে, "The Happy Prince"-এর Happy Prince-কে, বা "Waterloo"-র প্রথম ডিউক অফ ওয়েলিংটন Arthur Wellesley-কে। এমনকি তাঁদেরও বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়, যাঁদের দেখা আছে, নিদেনপক্ষে "The Man Who Would Be King"-এর Rudyard Kipling-কে, "Nabokov on Kafka"-র Vladimir Nabokov-কে, "Winchell"-এর Franklin D. Roosevelt-কে, বা "The Last Station"-এর Leo Tolstoy-কে। আর যাঁরা এই এক ডজন ছবির একটিও দেখেন নি, তাঁরা অন্তঃত "A Beautiful Mind"-এর Dr. Rosen-কে, অথবা "The Sound of Music"-এর Captain von Trapp-কে মনে করার চেষ্টা করুন। তিরাশি বছরের Plummer যেমন এই মুহূর্তে হলিউডের চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে versatile জীবিত কিংবদন্তি, দেবশঙ্কর তেমনই আমাদের সম্পদ। বস্তুতঃ, এ নাটকের সারা শরীর জুড়ে শুধুই তাঁর ঢেউ-এর ওঠাপড়া। বিশেষ করে, টাইরেসিয়াস-কে তাঁর তিরস্কার দৃশ্যে, বা ক্রেয়ন-কে সন্দেহের বশে অভিযুক্ত করার দৃশ্যে, কিংবা সর্বোপরি, পাপবোধে ধ্বস্ত হয়ে স্বীয় চক্ষু উৎপাটনের দৃশ্যে, তিনি এক এবং অনন্য।


           তবে হ্যাঁ, দেবশঙ্কর-এর অভিনয় গুনে এহেন চরিত্র (অয়দিপউস) অথবা অনির্বাণ-এর নির্দেশনা গুনে এহেন নাটক (অয়দিপউস) মঞ্চে গড়ে তোলা নিশ্চিতভাবেই সম্ভব হতো না, যদি না অভিনয় এবং লাস্য --- এই দুইয়ের মায়াজাল বিস্তার করে মঞ্চের সমস্ত আলো একাই শুষে নিতেন য়োকাস্তা সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়। তিষ্ঠ পাঠক ! অনতিদূর অতীতের সুড়ঙ্গে কিঞ্চিৎ হামা টেনে দেখুন তো, সুমন মুখোপাধ্যায়ের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে করা "রাজা লিয়ার"-এর Cordelia-কে মনে পরে কি? হ্যাঁ, ইনি সেই সেঁজুতিই বটে। এ নাটকে আখ্যান আর যৌনতার দুধ আর সর মন্থন করে আবেদনের যে মাখন অনির্বাণ নির্মাণ করেছেন, সেঁজুতি স্বয়ং সেই আবেদনময়ী মাখন। এ নাটকের সর্বশরীর জুড়ে দেবশঙ্কর যে ঢেউ-এর জোয়ার-ভাঁটা খেলিয়েছেন, সেঁজুতি সেই ঢেউয়েরই কোলে-কাঁখে খেলে ফিরেছেন ফেনিল বুদ্বুদ হয়ে --- অবাধ, আয়াসহীন, সাবলীল, সংকোচরহিত। তা সে নাটকের একেবারে প্রারম্ভে অয়দিপউস-এর সাথে সঙ্গম দৃশ্যেই বলুন, বা অয়দিপউস-এর কাছে ক্রেয়ন-এর মুক্তি দাবি করতে এসে লাইয়ুস-এর মৃত্যু আখ্যান পুনর্বর্ণনার দৃশ্যেই বলুন, কিংবা অন্তিম সময়ে সত্য জানার পর অয়দিপউসকে "স্বামী না পুত্র" সম্বোধনের দ্বিধাগ্রস্ততার মুহূর্তেই বলুন --- সেঁজুতি যেন দর্শকদের সম্মোহনের মায়াজালে বিমোহিত করে রাখলেন দেড় ঘণ্টা যাবত। কিঞ্চিৎ অতিরঞ্জন মনে হলেও, শুনে রাখুন পাঠক, আমার কিন্তু মুহুর্মুহু মনে পরে যাচ্ছিলো সেই এক এবং অদ্বিতীয়া, Elizabeth Taylor-কেই !


           পরিশেষে একটি প্রচলিত রসিকতা উত্থাপন করতে যাঞ্চা করি। দেবশঙ্কর-এর সেরা অভিনয় বেরিয়ে আসে হর'র নাটকেই (মানে হর ভট্টাচার্যের নাটক, Horror Play নয়); তাই তিনি আরও বহু হর'র নাটক (হর ভট্টাচার্যের নাটক) করুন; আর হর'র ছবির দর্শক (হরনাথ চক্রবর্তীর চলচ্চিত্রের দর্শক) যাই মনে করুন না কেন, হর'র ছবি (হরনাথ চক্রবর্তীর চলচ্চিত্র) বাস্তবিকই একেকটি হর'র ছবি-ই (Horror Film) হয়ে ওঠে শেষ তক ! অধিক মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

1 comment:

  1. Sunday Academy te dekhte jabo... Apnar review pore utsahito bodh korchhi...

    ReplyDelete